আমাদের কার্যক্রম
অসহায় ও এতিম শিশুদের শিক্ষা দান
আল-আনকাবূত ফাউন্ডেশন বিশ্বাস করে—প্রত্যেক শিশুই সম্ভাবনার এক একটি আলোকবর্তিকা। জন্মগতভাবে কেউ অসহায় বা এতিম হয়ে এ পৃথিবীতে এলেও, তারা যেন শিক্ষা ও স্নেহ থেকে বঞ্চিত না হয়, এটাই আমাদের অঙ্গীকার। শুধু শিক্ষা নয়, শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ গড়াও আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। এজন্য অনেক শিশুদের জন্য আমরা নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা সেবাও নিশ্চিত করি। শিশুদের স্কুলে যাওয়া ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়। অনেক সময় পথশিশুদের স্কুলে যুক্ত করতে প্রথমে কাউন্সেলিং, খেলার মাধ্যমে শেখানো, এবং ধাপে ধাপে মূল শিক্ষায় সংযুক্ত করার পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।আমাদের লক্ষ্য শুধু বইয়ের শিক্ষা নয়—একটি পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরি করা, যে সমাজে আত্মমর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে, অন্যের জন্য কিছু করতে শেখে।আমরা চাই, এই অসহায় ও এতিম শিশুরা যেন আর “অসহায়” না থাকে—তারা যেন হয় সমাজের শক্তি।আমাদের এই যাত্রায় সমাজের সকল সচেতন মানুষ, প্রতিষ্ঠান ও দাতাদের সহযাত্রী হওয়ার আমন্ত্রণ জানাই।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন –
“আমি ও এতিমের প্রতি সদয় ব্যক্তি জান্নাতে এই দুই আঙুলের মত একসাথে থাকবো।”
(সহীহ বুখারী: ৫৩০৪)
বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ
বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ চরম কষ্টে পড়ে—বাসস্থান হারায়, খাদ্য ও চিকিৎসার সংকটে পড়ে। এ সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া শুধু মানবিক দায়িত্ব নয়, বরং ইসলামে এটি একটি মহৎ ইবাদত হিসেবে বিবেচিত।
🕋 হাদীস:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার একটি দুঃখ দূর করে দেবেন।”
– (সহীহ মুসলিম: ২৬৯৯)
ত্রাণ বিতরণ, খাদ্য, পানি বা আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা – সবকিছুই এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত। যারা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের পাশে দাঁড়ানো মানে আল্লাহর রহমতের ছায়া অর্জন করা।
বন্যার সময় মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ, পোশাক ও আশ্রয়। যারা এসব জিনিস দিয়ে সাহায্য করে, তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে মহৎ কাজের অংশীদার হয়। আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
“তোমরা সৎকর্মে ও তাকওয়ায় একে অপরকে সাহায্য করো…”
— (সূরা মায়িদাহ: ২)
চিকিৎসা সেবা
স্বাস্থ্য সেবা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকেই রয়েছেন যারা শুধুমাত্র আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। সেই সকল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আল-আনকাবূত ফাউন্ডেশন কাজ করছে । আমরা বিশ্বাস করি, জীবন বাঁচানোই সর্বোচ্চ মানবতা। সেই বিশ্বাস থেকেই দরিদ্র ও বিপদাপন্ন রোগীদের জন্য চিকিৎসা ব্যয়, ওষুধ, অপারেশন, থেরাপি এবং হাসপাতালে ভর্তি খরচের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি। বিশেষ করে যেসব পরিবার হঠাৎ করেই কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু চিকিৎসা ব্যয় বহনের সামর্থ্য রাখেন না—আমরা চেষ্টা করি যেন তারা এই সংকটে একা না থাকেন। আমাদের ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানো হয়, যাদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী এবং গুরুতর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পান। চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা একটি যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগীকে নির্বাচন করি এবং তার প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা প্রদান করি।
অসহায়দের বাসস্থান
এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো গৃহহীন ও অসহায় মানুষদের জন্য নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। আমরা চেষ্টা করি অস্থায়ী নয়, বরং স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদি আবাসনের সুযোগ তৈরি করতে। ঘর তৈরির পাশাপাশি তাদের প্রাথমিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন খাট, কাঁথা, বালিশ, রান্নার সামগ্রী ও পোশাক সরবরাহ করা হয়।
বিশেষ করে যেসব পরিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অগ্নিকাণ্ড বা অন্য কোনো দুর্ঘটনায় সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে, আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের পাশে দাঁড়াই। এছাড়া এতিম শিশু, বিধবা নারী ও প্রবীণদের জন্য আলাদা বাসস্থান ব্যবস্থার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন চলছে।
শীতবস্ত্র বিতরণ
শীত আমাদের কাছে আরামদায়ক হলেও, হাজারো অসহায় মানুষের কাছে এটি হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ। খোলা আকাশের নিচে, ছেঁড়া কাপড়ে বা কোনো ঘরছাড়া অবস্থা তাদের প্রতিটি শীতের রাতকে করে তোলে দুঃসহ। এই কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে আল-আনকাবূত ফাউন্ডেশনগ্রহণ করেছে একটি আন্তরিক উদ্যোগ – শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি।
আমাদের এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্র, অসহায়, গৃহহীন এবং দুর্গম এলাকার মানুষদের মধ্যে কম্বল, সোয়েটার, জ্যাকেট, মোজা, উলের টুপি ও গরম পোশাক বিতরণ করা হয়। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের জন্য উপযোগী ও মানসম্পন্ন শীতবস্ত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।প্রত্যন্ত গ্রাম, চরাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা কিংবা শহরের রাস্তার পাশে বসবাসকারী মানুষ—যেখানে সরকারি সাহায্য পৌঁছাতে দেরি হয়, আমরা চেষ্টা করি সেখানে আগে পৌঁছাতে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা নিরবিচারে কাজ করে যাচ্ছে রাত-দিন, যাতে কোনো অসহায় মানুষকে শীতের কষ্টে না কাটাতে হয়।
এই উদ্যোগ শুধু কাপড় বিতরণ নয়, এটি একজন মানুষের জীবনে সম্মান, ভালোবাসা এবং সাহস পৌঁছে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা। হয়তো আপনার দেওয়া একটি কম্বল কোনো বৃদ্ধার কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠবে, বা কোনো শিশুর ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে রক্ষা পাবে।
আসুন, শীতকে আর কাউকে কাঁদাতে না দিই। আপনার সাহায্যে কেউ উষ্ণতা ফিরে পেতে পারে।
ইফতার ও রমাদান ফুড বিতরণ
পবিত্র রমাদান মাস মুসলিম জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়, যা আত্মসংযম, ইবাদত ও দান-সদকার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ এনে দেয়। এই পুণ্যময় মাসে আমাদের চারপাশে অনেক ভাই-বোন রয়েছেন, যারা ইফতারে একবেলা খাবার জোগাড় করতেও হিমশিম খায়। তাদের মুখে একটুখানি হাসি ফোটাতে এবং পেট ভরে ইফতার করাতে আল-আনকাবূত ফাউন্ডেশন চালু করেছে ইফতার ও রমাদান ফুড বিতরণ প্রকল্প।
বিশেষ করে যেসব এলাকা দুর্গম বা যেসব মানুষ রাস্তায়, স্টেশনে বা ফুটপাতে বসবাস করেন—আমরা সেসব স্থানে গিয়েই ইফতার পৌঁছে দিই। পাশাপাশি রমাদানের শুরুতে অনেক এলাকায় রমাদান ফুড প্যাকেট দেওয়া হয়, যাতে এক পরিবার পুরো রমাদান মাসের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পায় (চাল, ডাল, আটা, তেল, খেজুর, চিনি, ছোলা ইত্যাদি)।
এই পুরো কার্যক্রম পরিচালনায় আমরা স্বচ্ছতা ও নিষ্ঠা বজায় রাখি। আপনার দান সরাসরি ইফতার সামগ্রী কেনা ও বিতরণে ব্যবহৃত হয়। চাইলে আপনি নির্দিষ্ট একটি দিন স্পনসর করতে পারেন, বা কোনো এলাকার জন্য বিশেষভাবে খাদ্য বিতরণ করতে পারেন।
রমাদান আমাদের শেখায় – নিজের খাবার ভাগ করে নিতে। একদিনের ইফতার হয়তো আমাদের কাছে সাধারণ, কিন্তু কারো জন্য হতে পারে বছরের সবচেয়ে বরকতময় সন্ধ্যা।
সাদাকাহ জারিয়াহ
সাদকাহ জারিয়াহ মানে— যে দানের উপকারিতা শুধু এককালীন নয়; বরং দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকে। যে দানের উপকারিতা একবারই অর্জিত হয়, সেগুলোর সওয়াবও একবারই হয়। পক্ষান্তরে যে দানের উপকারিতা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকে, সেগুলোর সাওয়াব তথা বিনিময়ও মহান আল্লাহ দীর্ঘদিন পর্যন্ত অব্যাহত রাখেন।
আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তিন প্রকার আমল ছাড়া। ১. সাদাকাহ জারিয়াহ; ২. এমন ইলম বা জ্ঞান যার দ্বারা অন্যের উপকার হয়; ৩. পুণ্যবান সন্তান যে তার জন্যে দু’আ করতে থাকে’। (সহীহ মুসলিম: হাদীস-১৬৩১)
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
দলে যাচ্ছে আবহাওয়ার চিরচেনা চরিত্র। গরমের তীব্রতায় পুড়ছে দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৃক্ষ নিধনসহ আমাদেরই হাতের কামাইয়ের পরিণতি প্রত্যক্ষ করছি আমরা। এ থেকে রক্ষা পেতে দরকার প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো। এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে আল-আনকাবূত ফাউন্ডেশন প্রতিবছর সারাদেশে ফলজ বৃক্ষ রোপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মাসজিদ, মাদরাসা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী—যাদের গাছ লাগানোর মতো জমি রয়েছে—ফলজ গাছের চারা ক্রয় করে লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সাদাকায়ে জারিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ এবং দরিদ্রদের বছরব্যাপী আয়ের সুযোগ প্রদান করা হয়।
গাছ লাগানোর গুরুত্ব ও ফযীলত ও অপরিসীম। এটি একটি সাদাকায়ে জারিয়ামূলক নেক কাজ। যদি কেউ মানুষ কিংবা প্রাণীকূলের উপকার সাধনের লক্ষ্যে ফলজ বা বনজ গাছ রোপণ করে এবং এর মাধ্যমে সাওয়াব আশা করে, তবে এটি একটি উত্তম সাদাকায়ে জারিয়াহ; যার সওয়াবের ধারা ব্যক্তির মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তাহলে তা সে ব্যক্তির জন্য সাদাকাস্বরূপ।’ (সহীহ বুখারী: হাদীস-২৩২০, সহীহ মুসলিম: হাদীস-১৫৫৩)
আল-আনকাবূত ফাউন্ডেশন সাধারণত উন্নত জাতে র ফলজ গাছ লাগানোর চেষ্টা করে। যাতে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি গরিব মানুষের অর্থের সংস্থানও হতে পারে।